নাস্তিক ও ইসলাম বিদ্বেষীরা কিভাবে মানুষকে ধোকায় ফেলে- ২ - আইসিটিনোহাম

শিরোনাম

Post Top Ad

ইটাপোতা কলোনী জামে মসজিদ কম্প্লেক্স এন্ড তা’লিমুল কোরআন নুরানী ও হাফিজিয়া মাদ্রাসা- এখানে শিশু হইতে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি চলিতেছে, হিফয বিভাগে শুধুমাত্র ছাত্র ভর্তি চলিতেছে। যোগাযোগে-মুহতামিম অত্র মাদ্রাসা

পরিচিতি

পরিচিতি

মাদ্রাসার ফটক

প্রতিষ্ঠানের নাম:
ইটাপোতা কলোনী জামে মসজিদ কম্প্লেক্স এন্ড তা’লিমুল কোরআন
নুরানী ও হাফিজিয়া মাদ্রাসা

    গ্রাম : ইটাপোতা
    ইউনিয়ন : মোগলহাট
    ডাকঘর : মোগলহাট, 5501
    উপজেলা/থানা : লালমনিরহাট
    জেলা : লালমনিরহাট
    বাংলাদেশ।

নোটিশ বোর্ড

শ্রেণি সমূহ

1. নুরানী শাখা

    ক. শিশু শ্রেণি
    খ. প্রথম শ্রেণি
    গ. দ্বিতীয় শ্রেণি
    ঘ. তৃতীয় শ্রেণি
    ঙ. চতুর্থ শ্রেণি
2. হিফজ শাখা
    ক. নাজেরা
    খ. হিফজ

নাস্তিক ও ইসলাম বিদ্বেষীরা কিভাবে মানুষকে ধোকায় ফেলে- ২

আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা. এঁর সাথে ৯ বছর বয়সে প্রিয়নবীর ﷺ বাসর, এ সংক্রান্ত হাদিসের কিতাবে আসা এক বিভ্রান্তিকর তথ্য


মূলঃ ইসলাম বুহাইরি, কায়রো, মিসর।
ভাবানুবাদঃ সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া আজহারী
প্রথমেই বলে নিতে চাই যে, সবচাইতে প্রসিদ্ধ মত হচ্ছে আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা. এঁর বয়স বাসর রাতে ৯ বছর ছিল। সেটাই জমহুর উলামায়ে কেরামের মত। সেটা হলেও তা কোন অসুবিধা নেই। প্রিয় নবীজির ﷺ পবিত্র চরিত্রকে তা কোনভাবেই কলংকিত করে না৷ কেন করে না, তা গত আর্টিকেলে বিস্তারিত দলিল আদিল্লাহ সহ উপস্থাপন করেছি। কিন্তু দ্বিতীয় আরেকটা মতও আছে আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা. এঁর বয়স সংক্রান্ত, যার দিকে গতকালের লেখাতেই আমি ইশারা দিয়েছি। এই দ্বিতীয় মতটিকেও একদম উড়িয়ে দেয়া যায় না। সেটা নিয়ে এখানে আলোচনা হচ্ছে বিস্তারিত।
সহিহ বুখারী, মুসলিম ও আবু দাউদে এসেছে যে, নিশ্চয়ই হুজুর নবী করিম ﷺ আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা. এঁর সাথে বিয়ে করেন যখন আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা. এর বয়স ছিল ৬ ও বাসর করেন যখন তাঁর বয়স ৯৷ এই রেওয়ায়াতই ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পায় কারণ তা বুখারি ও মুসলিমে এসেছে।
যদিও তা কুরআন, সহিহ হাদিস, আকল, যুক্তি, প্রচলন, সামাজিক রীতি, নবী করিমﷺর নবুওয়াতের ঘোষণার পরের সকল ঘটনার নবুওয়াতের ঘোষণার পরের সকল ঘটনার ঐতিহাসিক ক্রমধারার সকল কিছুর বিপরীতে।
বুখারিতে ৫ টি ভিন্ন ভিন্ন তুরুকে এই হাদিসখানা বুখারিতে এসেছে, যার সারসংক্ষেপ একই রকম আর তা হলো,
হিশাম ইবনে ওরওয়াহ তাঁর পিতা ওরওয়াহ হতে তিনি আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা. হতে, আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা. বলেন,
নবি করিম ﷺ আমাকে শাদী করেন যখন আমার ৬ বছর বয়স আর আমার সাথে বাসর করেন যখন আমার ৯ বছর বয়স৷
এখন সিরাত ও ইতিহাসের মূল কিতাবগুলোর (কামিল, তারিখে দামেশক, সিয়ারু আলামিন নুবালা, তারিখে তাবারি, বেদায়া নেহায়া, তারিখে বাগদাদ ইত্যাদি) দিকে আমরা যদি ফিরে যাই তবে দেখতে পাই, প্রিয় নবীজির ﷺ নবুয়াতের ঘোষনার পরের ঘটনাগুলোর ক্রমধারা এমন যা সকল কিতাবগুলোই প্রায় একমতঃ
নবী করিম ﷺ ১৩ বছর মক্কা শরিফে অবস্থান করেন নবুয়াতের ঘোষনার পর, ১০ বছর মদিনাতে, ৬১০ ইসায়ী সনে নবুয়াতের ঘোষনা দেন, ৬২৩ ইসাই সনে হিজরত করেন, মক্কা শরিফে ১৩বছর অবস্থানের পর।
নবি করিম ﷺ ওফাত বরণ করেন ৬৩৩ইসায়ি সনে মদিনা শরিফে ১০ বছর অবস্থানের পর৷ এই ক্রমধারা অনুযায়ী ধরে নিই, আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা কে নবি করিম ﷺ বিয়ে করেন হিজরতের ৩ বছর আগে ৬২০ ইসায়ি সনে৷
এটাই নবি করিম ﷺর নবুয়াতের ঘোষনার ১০ম বছর৷ তখন আম্মাজানের বয়স ৬ বছর। আর বাসর হয় হিজরতের ১ম বছরের শেষ দিকে ৬২৩ ইসায়ী সনে তখন আম্মাজানের বয়স ৯ বছর৷ এটা অনুযায়ী আয়েশা রা. ৬১৪ ইসায়ী সনে জন্মগ্রহণ করেন। নবুয়াতের ঘোষনার ৪বছর পর৷ বুখারীর বর্ণনা অনুযায়ী। এটা একটা অনেক বড় বিভ্রান্তি।
ইতিহাসের আলোকে এই বর্ণনার রদঃ
১। হজরত সায়্যিয়াহ আয়েশা সিদ্দিকা রা এঁর বড় বোন সায়্যিদাহ আসমা বিনতু আবি বকর রা. এর বয়সের হিসাবেঃ
(হজরত আসমা বিনতু আবি বকর রা ইসলামের ইতিহাসের খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক মহিয়ষী নারী৷ নবী করিমﷺ ও আবু বকর সিদ্দিক রা. হিজরতের সময় গারে সওরে অবস্থানকালে তিনি নিজের কোমরবন্ধের সাথে বেঁধে নবি করিমﷺ ও আবু বকর সিদ্দিক রা এঁর জন্য খাবার ও পানীয় নিয়ে যেতেন। তখন তিনি প্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন এতে কোন সন্দেহ নেই। এটা বিখ্যাত ঘটনা। মেয়েরা সাধারণত পাজামা আটকে রাখার জন্য একটি কোমরবন্ধ পড়ে৷ তিনি এক্সট্রা আরেকটা পড়তেন, শুধু এই ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনের জন্য৷ যেজন্য উনাকে দুই কোমরবন্ধ ওয়ালী বলে ডাকা হত৷ তিনি জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবি হজরত জুবায়ের ইবনুল আওয়াম রা. এঁর স্ত্রী। ও আবু বকর সিদ্দিক রা এঁর জন্য খাবার ও পানীয় নিয়ে যেতেন। তখন তিনি প্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন এতে কোন সন্দেহ নেই। এটা বিখ্যাত ঘটনা। মেয়েরা সাধারণত পাজামা আটকে রাখার জন্য একটি কোমরবন্ধ পড়ে৷ তিনি এক্সট্রা আরেকটা পড়তেন, শুধু এই ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনের জন্য৷ যেজন্য উনাকে দুই কোমরবন্ধ ওয়ালী বলে ডাকা হত৷ তিনি জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবি হজরত জুবায়ের ইবনুল আওয়াম রা. এঁর স্ত্রী। হজরত জুবায়ের ইবনুল আওয়াম রা. নবি করিম ﷺর আপন ফুফাত ভাই৷ আবার উনাদেরই সন্তান হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে জুবায়ের রা. ইমাম হোসাইন রা. এঁর শাহাদাতের পর মক্কা- মদিনার স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ওমাইয়াদের জালিম গুন্ডা হাজ্জাজ নির্মমভাবে আব্দুল্লাহ ইবনে জুবায়ের রা. কে শহীদ করে এবং এই মহিয়ষী নারী হজরত আসমা বিনতু আবি বকর রা. এঁর উপরেও অত্যাচার করতে উদ্যত হয়৷ কিন্তু আসমা বিনতু আবি বকর রা. সেই জালিম হাজ্জাজের জবান বন্ধ করে দেন প্রিয় নবীজির ﷺ কিছু ভবিষ্যৎ বানী স্মরণ করিয়ে দিয়ে। তিনি প্রায় ১০০ বছর বয়সে মক্কা শরিফে ইন্তেকাল করেন। উনার পুরো জীবনিই ইতিহাস ও সিরাতের সকল কিতাবে গুরুত্ব সহকারে সংরক্ষিত আছে।)
সকল ইতিহাস ও সিরাতের কিতাব একমত যে, আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা. থেকে সায়্যিদাহ আসমা রা. ১০ বছরের বড় ছিলেন৷ আবার এতেও ইতিহাস ও সিরাতের কোন উৎসের কোন দ্বিমত নেই যে, নবি করিম ﷺর মদিনাতে হিজরতের ২৭ বছর আগে আসমা রা. জন্মগ্রহণ করেন। সেই হিসেবে নবি করিম ﷺর নবুয়াতের ঘোষনার সময় (৬১০ ইসায়ী সনে) তাঁর বয়স ছিল ১৪ বছর৷
এটা নবুয়াতের ঘোষনার পরের মক্কায় অবস্থানের ১৩ বছর মায়নাস করলেই বের হয়ে যায়। ২৭-১৩=১৪ বছর। আবার সকল ইতিহাস ও সিরাতের কিতাব একমত যে, আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা. বড়বোন আসমা বিনতু আবি বকর রা থেকে ১০ বছরের ছোট। কাজেই এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা নবুয়াতের ঘোষনার ৪ বছর আগে জন্মগ্রহণ করেন৷
অর্থ্যাৎ ৬০৬ ইসাই সনে৷ আর এটা খুব সরল হিসাবের দিকে ঠেলে দেয় যে, নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবুয়াতের ১০ম বছরে যখন উনাকে শাদী করেন তখন তাঁর বয়স ১৪ (৪+১০) বছর ছিল৷ কাজেই এটা প্রমাণ করে যে, আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা. ৬০৬ ইসাই সনে জন্মগ্রহণ করেন।
আর ৩ বছর পর অর্থ্যাৎ হিজরতের বছরের শেষদিকে আম্মাজানের সাথে যখন নবীজির ﷺ বাসর হয় তখন আয়েশা সিদ্দিকা রা এর বয়স ১৭ বছর (১৪ + ৩=১৭)। এটাই হচ্ছে প্রকৃত বয়স যখন আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা এঁর সাথে নবি করিম ﷺর বাসর হয়।
২।হজরত আসমা বিনতু আবি বকর রা এঁর ওফাতের হিসাবে আয়েশা সিদ্দিকা রা এর বয়সঃ সকল ইতিহাস ও সিরাতের কিতাব একমত যে, আসমা বিনতু আবি বকর রা. ঐতিহাসিক একটি বছর শেষে ইন্তেকাল করেন। সেই ঐতিহাসিক বছরটি হচ্ছে জালিম হাজ্জাজের হাতে তাঁর পুত্র সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ ইবনে জুবায়ের রা. এঁর শাহাদাতের বছর, আর তা হচ্ছে ৭৩ হিজরি সন।
তখন তাঁর বয়স ১০০ বছর। এতেও সবাই একমত। এখন যদি তাঁর ইন্তেকালের সন ৭৩ হি. কে তাঁর মোট বয়স ১০০ থেকে বিয়োগ দিই তাহলে বের হয় ১০০-৭৩=২৭। এই ২৭ ই হচ্ছেই সেই হিজরতের সময়ে প্রাপ্ত তাঁর বয়স৷ এই বয়সই ইতিহাস ও সিরাতের কিতাবে প্রাপ্ত তাঁর জন্মসনের সাথে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এই ২৭ বছর থেকে যদি ১০ বিয়োগ করি তবে বের হয় হিজরতের সময় আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা. এর বয়স অর্থ্যাৎ ১৭ বছর। এক বছর পর বাসর রাতের সময় তাঁর বয়স হয় ১৮ বছর।
এটাই সেই বয়স যা তারিখে তাবারি সুস্পষ্টভাবে ইয়াকিনের সাথে বর্ণনা করেন তার তারিখুল উমাম কিতাবে, "নিশ্চয়ই আবু বকর সিদ্দিক রা. এর সকল সন্তান জাহেলিয়াত যুগে অর্থ্যাৎ ইসলামের পূর্বে জন্মগ্রহণ করেন।" ঐতিহাসিক সময়কালের ক্রমধারার সাথেও তা সামঞ্জস্যপূর্ণ। এটা বুখারি শরিফের বর্ণনার বিরুদ্ধাচারণ করে। নিশ্চয়ই আয়েশা সিদ্দিকা রা. এর জন্ম হয়েছিল নবুয়াতের ঘোষনার ৪ বছর আগে।
৩। নবী নন্দিনী হজরত ফাতেমাতুজ জাহরা রা এর বয়সের তুলনায় আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা এর বয়সঃ ইবনু হাজর আসকালানী রাহ. ইসাবাহ কিতাবে বর্ণনা করেন, হজরত ফাতেমাতুজ জাহরা রা. কাবা নির্মানের বছরে জন্মগ্রহণ করেন। সেসময় নবী করিম ﷺর বয়স ৩৫ বছর। আর হজরত ফাতেমাতুজ জাহরা রা. আম্মাজান আয়েশা থেকে ৫ বছরের বড় ছিলেন।
এই রেওয়ায়াত অনুযায়ী আমরা দেখতে পাচ্ছি, আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী রাহ. যিনি বুখারীর ব্যাখ্যাকারদের অন্যতম তিনিও আয়েশা সিদ্দিকা রা. এর বয়স সংক্রান্ত বুখারির বর্ণনা মানছেন না। যদিও এই বর্ননাটি সহিহ না তেমন কিন্তু ইবনে হাজর আসকালানী রাহ বুখারির ব্যাখ্যাকার।
তিনি এই বর্ণনা অনুযায়ী বলছেন, ফাতেমাতুজ জাহরা রা প্রিয় নবীজির ﷺ ৩৫ বছর বয়সে জন্মগ্রহণ করেন। তার ৫ বছর পর নবীজির ﷺ ৪০ বছর বয়সের সময় আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা জন্মগ্রহণ করেন, সেই বছরই ওহি অবতারণ বা নবুয়াতের ঘোষনার বছর। সে হিসেবে হিজরতের সময় সায়্যিদাহ আয়েশা সিদ্দিকা রা এর বয়স ১৩ বছর। কোনভাবেই ৭ বছর নয়৷ এই রেওয়াতখানা আনার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো বুখারির বর্ণনার বিপরীত ধর্মী মত আছে তা বর্ণনা করে।
হাদিস ও সিরাতের কিতাব থেকে বুখারির বর্ণনার খন্ডনঃ
১। (এই দলিলটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ)
বুখারির নিজের বর্ণনাতেই এসেছে, নিশ্চয়ই আয়েশা সিদ্দিকা রা বলেছেন,
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহধর্মিণী ‘আয়িশা (রাঃ) হতে থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যেদিন হতে আমার জ্ঞান বুদ্ধি হয়েছে সেদিন হতেই আমি আমার আব্বা আম্মাকে দ্বীনের আনুসারী হিসাবেই পেয়েছি। আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, আবূ সালিহ্‌ (রহঃ) ............. ‘আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যেদিন হতে আমার জ্ঞান বুদ্ধি হয়েছে সেদিন হতেই আমি আমার আব্বা আম্মাকে দ্বীন ইসলামের অনুসারীরূপে পেয়েছি এবং আমাদের এমন কোন দিন যায়নি, যে দিনের দু’ প্রান্তে সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট আসেননি। যখন মুসলিমগণ কঠিন বিপদের সম্মুখীন হলেন তখন আবূ বকর (রাঃ) হাবশা (আবিসিনিয়া) অভিমুখে হিজরতের উদ্দেশে যাত্রা করলেন।... সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২২৯৭
কিভাবে ইমাম বুখারি রাহ এই বর্ণনা করলেন যে, আয়শা সিদ্দিকা রা বলছেন "যেদিন হতে আমার জ্ঞান বুদ্ধি হয়েছে সেদিন হতেই আমি আমার আব্বা আম্মাকে দ্বীন ইসলামের অনুসারীরূপে পেয়েছি"
এবং তা হাবশাতে হিজরতের আগে।
তিনি আরো বলেন হুজুর রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রতিদিন তাদের ঘরে আসতেন। এটা সুস্পষ্টভাবে বলে তিনি সেসব সাক্ষাতের সময় বুঝদার ছিলেন। আর নিশ্চিতভাবে হাবশায় হিজরত সকল ইতিহাস ও সিরাতের কিতাবের ঐক্যমত্য নবুয়াতের ঘোষনার ৫ম সনে সংঘটিত হয়। এখন যদি বুখারীতে বর্ণিত আয়েশা সিদ্দিকা রা এর বয়সের বর্ণনা মেনে নিই (নবুয়াতের ঘোষণাত ৪র্থ বছরে জন্ম) তবে হাবশায় হিজরত এর সময় আয়েশা সিদ্দিকা রা এর বয়স হয় ১ বছর৷ তিনি তখন দুধের শিশু।
এই কথা কিভাবে উক্ত হাদিসে আসা "যেদিন হতে আমার জ্ঞান বুদ্ধি হয়েছে সেদিন হতেই আমি আমার আব্বা আম্মাকে দ্বীন ইসলামের অনুসারীরূপে পেয়েছি" এই কথার সাথে কিভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়? বরং সময়ের ক্রময়ানুসারের সঠিক হিসেবে হাবশায় হিজরতের সময় আয়েশা সিদ্দিকা রা. এঁর বয়স ছিল ৪+৫=৯ এটাই সঠিক। নবুয়াতের ঘোষনার ৪ বছর আগে জন্ম এবং ৫ বছর পর হাবশায় হিজরত। এজন্যই তিনি সেই সময়ের সকল ঘটনা মনে রেখেছেন।
২।(এটাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দলিল)
বুখারি শরীফেই এসেছে,
‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, (সূরাতুল কমরের আয়াত) بَلْ السَّاعَةُ مَوْعِدُهُمْ وَالسَّاعَةُ أَدْهَى وَأَمَرُّ আয়াতটি মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর প্রতি মাক্কাহ্য় অবতীর্ণ হয়েছে। আমি তখন কিশোরী ছিলাম, খেলাধূলা করতাম। [৪৯৯৩] (আ.প্র. ৪৫০৯, ই.ফা. ৪৫১২)
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৪৮৭৬
আর কোন মতপার্থক্য ছাড়াই এটা প্রমাণিত যে নবুয়াতের ঘোষনার ৪বছর পর ৬১৪ ইসাই সনে সূরাতুল কমর অবতীর্ণ হয়েছে।
কাজেই বিয়ের সময় ৬ ও ৯ বছরের বুখারীর সেই বর্ণনা মেনে নিলে, সূরাতুল কমর অবতীর্ণ হওয়ার সময় আয়েশা সিদ্দিকা রা দুধের শিশু হওয়ার কথা অথবা তাঁর জন্মই হয়নি৷ অথচ তিনি বলছেন তখন তিনি কিশোরী ও খেলাধুলা করেন। কাজেই বিবেক বলে তখন তাঁর বয়স কমপক্ষে ৮-৯ বছর ছিল। যা প্রমাণ করে আমাদের সেই কথা, উনার জন্ম নবুয়াতের অন্তত ৪ বছর আগে। আর না হয় সুরা কমর অবতীর্ণ হওয়ার সময় তিনি কিশোরী হতে পারেন না।
৩। ইবনে কাসির বেদায়া নেহায়াতে বলেন, যারা সবার আগে ইসলাম গ্রহণ করেন তাদের মাঝে মেয়েদের মধ্যে আসমা বিনতু আবি বকর রা ও আয়েশা সিদ্দিকা রা যিনি ছোট ছিলেন। তাদের ইসলাম গ্রহণ ছিল সেই প্রথম ৩ বছরের মাঝে যখন নবি করিম ﷺ গোপনে ইসলাম প্রচার করছিলেন। অতঃপর নবি করিম ﷺকে আল্লাহ পাক প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচারের আদেশ দেন। এই রেওয়ায়াত প্রমাণ করে আয়েশা সিদ্দিকা রা নবুয়াতের ঘোষনার ৪র্থ বছরে প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার শুরুর আগেই ইসলাম গ্রহণ করেন।
কাজেই আমরা যদি ধরে নিই যে, নবুয়াতের ঘোষনার ৩য় বছরেও যদি আয়েশা সিদ্দিকা রা ইসলাম গ্রহণ করে থাকেন তবুও বুখারীর বর্ণনা নবুয়াতের ঘোষনার ৪ বছর পর আয়েশা সিদ্দিকা রা এর জন্ম সেই বর্ণনা ঠিক হয় না।
৪। ইমাম বুখারির সরাসরি ওস্তাদ ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ. তাঁর বিখ্যাত হাদিসের কিতাব মুসনাদে বলেন, আয়েশা সিদ্দিকা রা বলেন, যখন খাদিজাতুল কুবরা রা ইন্তেকাল করলেন, খাওলা বিনতে হাকিম রা. এলেন এবং বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ ﷺ আপনি কি বিয়ে করবেন না? নবি করিম ﷺজিজ্ঞেস করলেন (পাত্রী) কে? তিনি বললেন, যদি কুমারী চান তবে কুমারী, আর বিধবা চাইলে বিধবা।
নবি করিম ﷺজিজ্ঞেস করলেন,
কুমারী কে? তিনি বললেন, আপনার কাছে আল্লাহর সবচাইতে প্রিয় সৃষ্টি আবু বকর সিদ্দিক রা এর কন্যা আয়েশা। এখানে স্পষ্ট হয় যে খাওলা বিনতে হাকিম রা বিধবা ও কুমারী উভয়ের কথাই পেশ করেছেন নবি করিমের ﷺ কাছে।
তাহলে তিনি যখন পেশ করেছেন প্রস্তাব তখন এমন কারো কথা পেশ করেছেন যারা বিয়ের জন্য তৈরি হবেন? তাদের একজন এখনো শিশু যার বালিগা হওয়ার জন্য নবি করিম ﷺকে অপেক্ষা করতে হবে? হাদিসের বাচনভঙ্গি বলছে নিশ্চিতরুপে তিনি তাদের প্রস্তাব রেখেছেন উপস্থিত মূহুর্তে বিয়ে করতে পারবেন বলেই। কারণ তিনি তখনই বলেছেন, "যদি চান কুমারী যদি চান বিধবা।"
আকল সম্মতি দেয় না যে, খাওলা বিনতে হাকিম রা ৬বছর বয়সের কোন শিশুর নাম প্রস্তাব করে বলবেন কুমারী।
৫। ইমাম বুখারির সরাসরি ওস্তাদ ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ. তাঁর বিখ্যাত হাদিসের কিতাব মুসনাদেই আয়েশা সিদ্দিকা রা এর বিয়ের প্রস্তাব সংক্রান্ত দীর্ঘ ঘটনায় আরো বলেন যখন খাওলা বিনতে হাকিম রা এই প্রস্তাব দেন তখন উম্মে রুম্মান রা. বলেন , "নিশ্চয়ই মুতইম ইবনে আদি তাঁর ছেলের জন্য প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে (আয়েশার জন্য)। আর আল্লাহর কসম আবু বকর সিদ্দিক রা কখনোই তার ওয়াদার খেলাফ করবেন না৷ .... হয়ত তুমি আমার ছেলেকে মুসলিম বানানোর চেষ্টা করবে!"
এর সহজ সরল অর্থ হচ্ছে মুতইম ইবনে আদি তার ছেলে জুবায়ের ইবনে মুতইম এর জন্য আয়েশা সিদ্দিকা রা. এর জন্য বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে রেখেছিল। আর সে ছিল কাফির৷ আর আবু বকর সিদ্দিক রা কখনোই ওয়াদা ভাংতেন না। তখন আবু বকর সিদ্দিক রা মুতইম ইবনে আদির কাছে গেলে সে বলল, আমি যদি তোমার মেয়েকে আমার ছেলের জন্য আনি তবে হতে পারে তুমি আমার ছেলেকে মুসলমান করে ফেলবে।"
এখান থেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা রেজাল্ট বের হয়, আয়েশা সিদ্দিকা রা এর কিভাবে ৬ বছর বয়সের আগেই একজন পরিপূর্ণ বয়সের মানুষের সাথে বিয়ে শাদী ঠিক হয়ে থাকতে পারে? কারণ জুবায়ের ইবনে মুতইম বদর ও উহুদে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। যেভাবে এটাও অসম্ভব মনে হয় যে, আবু বকর সিদ্দিক রা তার কন্যার একজন মুশরিকের সাথে বিবাহ দিতে যাবেন তার বাবার কাছে, যে ব্যক্তি মক্কাতে মুসলমানদেরকে কষ্ট দিচ্ছিল৷
এটা এই প্রমাণ করে যে, নিশ্চয়ই এটা বিবাহের প্রস্তাব ছিল যা নবুয়াতের ঘোষনার আগে ঠিক হয়েছিল যখন তারা দুজন খুবই ছোট ছিলেন। এটা এই প্রমাণ করে যে আয়েশা সিদ্দিকা রা নবুয়াতের ঘোষনার আগে জন্মগ্রহণ করেন।
বুখারীর এই হাদিসের সনদের রুগ্নতার বর্ণনাঃ
এই হাদিসখানা বুখারিতে ৫ টি ভিন্ন ভিন্ন তুরুকে এসেছে। সকল তুরুক এসে হজরত ওরওয়াহ রাহ. এর সন্তান হিশাম ইবনে ওরওয়াহ রাহ. তে এসে শেষ হয়েছে। ওরওয়াহ রা. এই হাদিস এককভাবে বর্ণনা করেছেন আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা হতে এবং উনি থেকে উনার সন্তান হিশাম ইবনে ওরওয়াহ রাহ.ও এককভাবে বর্ণনা করেছেন এই হাদিস।
হিশাম রাহ. তে এসেই সমস্যা। ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী রাহ তাহজিবে বলেন, আব্দুর রহমান ইবনে ইউসুফ ইবনে খাররাশ বলেন, মালিক রাহ. তার ব্যাপারে সন্তুষ্ট ছিলেন না।
সহজভাবে হিশাম ইবনে ওরওয়াহ সত্যবাদী ছিলেন মদিনার রেওয়ায়াতগুলোতে। কিন্তু যখন ইরাক গেলেন তার স্মৃতি শক্তি ও মুখস্থ শক্তিতে সমস্যা দেখা দিল৷ তিনি তাদলিস (উপরস্থ রাবির নাম লুকানো) করা শুরু করলেন।
এখন আমরা যদি উপরোক্ত এই হাদিসের উপর এই বিষয়টি প্রয়োগ করি তবে দেখতে পাই ঘটনা আসলেই সত্য। আলোচ্য এই হাদিসখানা মদিনাবাসী কেউ বর্ণনা করেন নাই হিশাম ইবনে ওরওয়াহ রাহ থেকে বরং যারাই বর্ণনা করেছেন সকলেই ইরাকী।
কাজেই এটা খুবই সম্ভব যে, বুখারি, মুসলিম ও আবু দাউদে আসা আয়েশা সিদ্দিকা রা এর বিয়ের বয়স সংক্রান্ত উপরোক্ত বর্ণনাতে হিশাম ইবনে ওরওয়াহ রাহ. তিসয়াতা আশার অর্থ্যাৎ উনিশ (১৯) এর জায়গায় শুধু তিসয়াহ বা নয় বলে দিয়েছেন এবং সিত্তাতা আশার (১৬) এর জায়গায় শুধু সিত্তাহ বা ছয় বলে দিয়েছেন।
আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবিব ﷺ অধিক অবগত আছেন।

No comments:

Post a Comment