অপবাদ-১ঃ "ইসলাম অপ্রাপ্তবয়স্ক ঋতু হয়নি এমন মেয়ে শিশুদের সাথে বিয়ে ও সহবাস জায়েজ বলে"
কৃতঃ সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া আজহারী
নাস্তিকরা কিভাবে সাদাসিধে মুসলমানদের মাঝে সন্দেহের বীজ বপন করে তার একটা প্রকৃষ্ট উদাহরণ জবাবসহ দিতে যাচ্ছি আজ ইন শা আল্লাহ। ওয়া মা তাওফিকি ইল্লা বিল্লাহ৷
তারা দুই সুরা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন দুই প্রেক্ষাপটে
ও ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণীর নারীদের ব্যাপারে অবতীর্ণ আয়াতকে এক জায়গায় জোড়া দিয়ে রেজাল্ট বের করতে চায় যে, "ইসলাম মেয়ে শিশুদের সাথে বিয়ে ও সহবাস জায়েজ বলে, যারা বালিগা হয়নি, যাদের মাসিক শুরু হয়নি।"
প্রথমে তারা সূরাতুল আহজাবের ৪৯ নং আয়াত পেশ করে বলে যেসব নারীকে স্পর্শ করা হয় না অর্থ্যাৎ যাদের সাথে সহবাস হয় না তাদের ইদ্দত (নারীদের জন্য তালাকের পর ৩ মাস বিয়ে না করে অপেক্ষা করার নাম ইদ্দত) পালন করতে হয় না তালাক হয়ে গেলে। আর ইদ্দত পালন তাদেরকেই করতে হবে যাদের সাথে সহবাস হয়েছে। আল্লাহ পাক বলছেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نَكَحْتُمُ الْمُؤْمِنَاتِ
ثُمَّ طَلَّقْتُمُوهُنَّ مِن قَبْلِ أَن تَمَسُّوهُنَّ فَمَا لَكُمْ عَلَيْهِنَّ
مِنْ عِدَّةٍ تَعْتَدُّونَهَا ۖ فَمَتِّعُوهُنَّ وَسَرِّحُوهُنَّ سَرَاحًا
جَمِيلًا
মুমিনগণ! তোমরা যখন মুমিন নারীদেরকে বিবাহ কর, অতঃপর তাদেরকে স্পর্শ করার পূর্বে তালাক দিয়ে দাও, তখন তাদেরকে ইদ্দত পালনে বাধ্য করার অধিকার তোমাদের নাই। অতঃপর তোমরা তাদেরকে কিছু দেবে এবং উত্তম পন্থায় বিদায় দেবে। (৩৩ঃ৪৯)
এরপর তারা বিশাল জাম্প করে চলে যায়, সূরা তালাকের ৪ নং আয়াতে। যেখানে আল্লাহ পাক বলছেন, সেসকল মেয়ে যাদের ঋতু হয়নি তাদেরকে তালাক দিলেও ইদ্দত ৩ মাস। আল্লাহ পাক বলছেন,
وَاللَّائِي يَئِسْنَ مِنَ الْمَحِيضِ مِن نِّسَائِكُمْ إِنِ
ارْتَبْتُمْ فَعِدَّتُهُنَّ ثَلَاثَةُ أَشْهُرٍ وَاللَّائِي لَمْ يَحِضْنَ ۚ
وَأُولَاتُ الْأَحْمَالِ أَجَلُهُنَّ أَن يَضَعْنَ حَمْلَهُنَّ ۚ وَمَن يَتَّقِ
اللَّهَ يَجْعَل لَّهُ مِنْ أَمْرِهِ يُسْرًا
তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যাদের ঋতুবর্তী হওয়ার আশা নেই, তাদের ব্যাপারে সন্দেহ হলে তাদের ইদ্দত হবে তিন মাস। আর যাদের ঋতু হয়নি, তাদেরও অনুরূপ ইদ্দতকাল হবে। গর্ভবর্তী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তানপ্রসব
পর্যন্ত। যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার কাজ সহজ করে দেন।(৬৫ঃ৪)
কাজেই এই দুই আয়াত মিলিয়ে ২ এ ২ এ চার মিলিয়ে তারা যে রেজাল্টগুলো
বের করে, তা হল শিশুদেরকে তালাক দিলেও ইদ্দত করতে বলা হয়েছে, তার মানে শিশুর সাথেও সহবাস করা যায়, কারণ সূরা আহজাবের আগের আয়াতে বলা হয়েছে ইদ্দত তাদের জন্য যাদের সাথে সহবাস হয়েছে।
তাদের ভুলগুলোঃ
১। সূরা তালাকে ৪ নং আয়াতে " আর যাদের ঋতু হয়নি" দ্বারা অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে বুঝে নেয়া৷ কারণ দুনিয়াতে অসংখ্য নারী আছে যাদের হরমোনাল সমস্যা অথবা অন্য কোন কারণে কোনদিনই ঋতু হয়নি। তারা কখনো বাচ্চা জন্মও দিতে পারবে না। কাজেই এই আয়াত সেসমস্ত রোগী মেয়েদের সম্পর্কেও নাজিল হতে পারে যাদের কখনোই ঋতু হয়নি৷ এখানে নিশ্চিতরুপে
মেয়ে শিশু ধরে নেয়াটা এক ধরনের ভুল।
২। যদি ধরেও নিই যে, এখানে যাদের ঋতু হয়নি
দ্বারা শিশু মেয়েদেরকেই বুঝানো হয়েছে, তবুও এর দ্বারা সেসব শিশুদের সাথে সহবাসের বৈধতা প্রমাণিত হয় না৷ কারণঃ
i. উপরোক্ত দুইখানা আয়াতের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমরা প্রেক্ষাপট ও শানে নুজুল না বুঝে আয়াত বিবেচনা করলে এরকম ভুল রেজাল্ট বের হবে যা খুবই স্বাভাবিক।
সূরা তালাকের ৪ নং আয়াতের প্রেক্ষাপটে সুস্পষ্টভাবে এসেছে, হজরত উবাই ইবনে কাব রা. বলছেন, যখন প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের ইদ্দত সম্পর্কে সূরাতুল বাকারাতে আয়াত নাজিল হয়ে গেল তখন নারীরা সেসস নারীদের ইদ্দত সম্পর্কে হুজুর রাসূলুল্লাহ ﷺকে জিজ্ঞেস করলেন, যাদের ঋতু হয়নি, যাদের ঋতু বন্ধ হয়ে গেছে (ম্যানুপজে আছে), এবং গর্ভবতী নারীদের ইদ্দত কত দিন? তখন সূরা তালাকের আয়াতখানা নাজিল হয়। (তাফসিরে ইবেন কাসিরে সূরা তালাকের ৪ নং আয়াতের তাফসির দেখুন, অনেকগুলো রেওয়ায়াত আছে এ সম্পর্কিত)
খালি চোখে বিবেচনা করে নাস্তিক ও ইসলাম বিদ্বেষীরা এই ভুলটি করার কারণ হচ্ছে, দুই আয়াতের উদ্দিষ্ট মানুষগুলো কখনোই এক নয়, এটা মিস করা৷ সূরা আহজাবের ৪৯ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে প্রাপ্তবয়স্ক
নারীদের ইদ্দত নিয়ে। কিন্তু কনফিউশান থাকার কারণে বাকি এই তিন শ্রেণীর নারীদের ইদ্দত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো যার প্রেক্ষিতে সুরা তালাকের ৪ নং আয়াত নাজিল হল।
কাজেই সম্পূর্ণ ভিন্ন দুই সুরার ভিন্ন ভিন্ন দুই আয়াতের ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটের ভিন্ন ভিন্ন বয়স ও শারীরিক অবস্থাসম্পন্ন নারীদের ভিন্ন ভিন্ন হুকুমকে জোড়াতালি দিয়ে ইসলামকে বদনাম করতে চাওয়া বড় মারাত্মক সমস্যা, যা ইসলাম বিদ্বেষী ও নাস্তিকেরা সবসময় করে থাকে। এটা ইউরোপীয় তাদের কাউন্টার পার্ট অরিয়েন্টালিস্টদের (উদাহরণ স্বরুপ মি. রিচার্ড ডকিন্স) শেখানো তরিকা।
ii. হ্যাঁ, যদি মেনেও নিই যে, ওই "ঋতু যাদের হয়নি" দ্বারা বাচ্চা শিশু উদ্দেশ্য তবুও নাস্তিকরা যে রেজাল্ট বের করতে চাচ্ছে তা বের হয় না। কারণ, হ্যাঁ, ইসলামে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে যাদের ঋতু হয়নি তাদের সাথে বিয়ে বা আকদ করা জায়েজ। এটা প্রি- ইসলামিক একটা বিষয়। কিন্তু সহবাস হবে ঋতু শুরু হওয়ার পর অর্থ্যাৎ ইসলামের দৃষ্টিতে বালিগা হওয়ার পরই কেবল৷
এখন কোন মেয়েকে যদি ধরুন ৫ বছর বয়সে তার বাবা বিয়ে দিয়ে দেন। কিন্তু কথাবার্তা হয় যে, ওঠিয়ে দেবেন বালিগা হলে পরে। কিন্তু এরই মাঝে তালাক হয়ে যায়, সেই ক্ষেত্রে সেই মেয়েটা ইদ্দত পালন করবে কীনা, সেই বিষয়ে এই আয়াতে আলোচনা হচ্ছে। এখানে অপ্রাপ্তবয়স্ক
ঋতু হয়নি এমন মেয়ের সাথে সহবাস করা না করা কোনভাবেই সাবিত হয় না। সেটা প্রেক্ষাপট ও প্রসঙ্গই না সূরা তালাকের ৪ নং আয়াতের।
বাস্তবিক উদাহরণ দিই হুজুর রাসূলুল্লাহ
ﷺর জীবন থেকে। যেই শাদী মুবারক নিয়ে নাস্তিক ও ইসলাম বিদ্বেষীরা সবচাইতে বেশি চীৎকার চেচামেচি করে। সেই আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা. এবং হুজুর রাসূলুল্লাহ ﷺর বিয়ে নিয়ে গবেষণা করলেই সেটা বুঝে যাব।
১ম কথা, আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা. এঁর বিয়ের সময় বয়স কত ছিল তা নিয়ে পরস্পর বিপরীতধর্মী অনেক মত আছে মুসলিম স্কলারদের মাঝে। বেশিরভাগের মতে প্রসিদ্ধ যেই মত, বিয়ের সময় ৬ বছর আর বাসর রাতের সময় ৯ বছর সেটারই পক্ষে। আবার কেউ কেউ বিয়ের সময় ১৬ বছর ও বাসর রাতের সময় ১৮/১৯ বছর ছিল বলে মত দিয়েছেন। এর পক্ষে অনেক ক্যালকুলেশন তারা দেখিয়েছেন। তারা বলেন বুখারি ও আবু দাউদের বিখ্যাত বর্ণনাগুলোতে
"আশারা" শব্দখানা বাদ গিয়েছে।
আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা এঁর ১০ বছরের বড় বোন সায়্যিদাহ আসমা বিনতু আবি বকর রা. এঁর সাথে বয়সের হিসাব করে, হজরত সায়্যিদাহ ফাতেমাতুজ জাহরা রা. এঁর সাথে বয়সের তুলনা করে এবং সিরতের অন্যান্য গ্রহণযোগ্য বর্ণনা ও বুখারি, মুসলিমসহ আরো বিভিন্ন হাদিসের আলোকেই প্রমাণ হয় যে, আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা. এঁর বয়স বাসর রাতের সময় ৯ ছিল না বরং ১৭,১৮ কিংবা ১৯ ছিল। আসলে হিশাম ইবনে ওরওয়াহ রাহ. এঁর বর্ণনাতে আশারাহ বা দশ বাদ গিয়েছে। হওয়া উচিত ছিল সিত্তাতা আশার (১৬) এবং তিসয়াতা আশার (১৯)। হয়ে গেছে সিত্তাহ ও তিসয়াহ। এর কারণ হিসেবে এসেছে হিশাম ইবনে ওরওয়া রাহ. যার কাছে গিয়ে এই হাদিসের সকল সনদ শেষ হয়েছে, যিনি ওরওয়াহ ইবনে জুবায়ের রা. এঁর সন্তান, যিনি আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা এঁর বড় বোন সায়্যিদাহ আসমা বিনতু আবি বকর রা. এর সন্তান। সায়্যিদা আসমা রা. এঁর নাতি হিশাম রাহ. যখন শেষ বয়সে ইরাকে চলে আসলেন তখন তিনি ইখতিলাত (প্যাঁচ লাগানো) করতেন। মদিনার জীবনের বর্ণনাগুলো সম্পূর্ণ সঠিক ছিল। কিন্তু শেষ জীবনে ইরাকে আসার পর তার স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যায়। আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা এঁর বিয়ের বয়সের বর্ণনা সংক্রান্ত হাদিসগুলো তার শেষ জীবন অর্থ্যাৎ ইরাকের জীবনের বর্ননা।
এই আলোচনাটি দীর্ঘ আরেকটি আর্টিকেল লেখার দাবি রাখে। তাই আরেকদিনের আলোচনার জন্য রেখে দিলাম। বিস্তারিত বর্ণনা করে প্রমাণ করে দেব ইন শা আল্লাহ যে, আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা এঁর বয়স ১৭,১৮ কিংবা ১৯ ছিল যখন তাঁর বাসর হয় হুজুর রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার সাথে৷ কোনভাবেই ৯ বছর ছিল না৷
২য় কথা, যদি ধরেও নিই যে, ৬ বছর ও ৯ বছরের বর্ণনাই ঠিক তবুও এখানে অনেক দলিল আছে আমাদের মতের স্বপক্ষে যে আম্মাজান আয়েশা রা. এর শিশু অবস্থায় বিয়ে হয়েছে কিন্তু বাসর হয়েছে বালিগা হওয়ার পর।
আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমার ছয় বা সাত বছর বয়সে (রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে বিয়ে করেন। আমরা মদিনায় আগমন করলে একদল মহিলা আসলেন। বর্ণনাকারী বিশরের বর্ণনায় রয়েছেঃ আমার নিকট (আমার মা) উম্মু রূমান (রাঃ) আসলেন, তখন আমি দোলনায় দোল খাচ্ছিলাম। তিনি আমাকে নিয়ে গেলেন, আমাকে প্রস্তুত করলেন এবং পোশাক পরিয়ে সাজালেন। অতঃপর আমাকে রাসূলুল্লাহ
(ﷺ)-এর নিকট পেশ করা হলো। তিনি আমার সঙ্গে বাসর যাপন করলেন, তখন আমার বয়স নয় বছর। মা আমাকে ঘরের দরজায় দাড় করালেন এবং আমি উচ্চহাসি দিলাম। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, অর্থাৎ আমার মাসিক ঋতু হয়েছে। আমাকে একটি ঘরে প্রবেশ করানো হলো। তাতে আনসার গোত্রের একদল মহিলা উপস্থিত ছিলেন। তারা আমার জন্য কল্যাণ ও বরকত কামনা করলেন।
সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৯৩৩
আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা. নিজেই বলেছেন, ৯বছর বয়সে মেয়েরা মহিলা হয়ে যায়। তিনি একথা তার বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতাতেই বলেছেন।
إذا بلغت الجارية تسعًا فهي امرأة
মেয়ে যখন নয় বছরে উপনীত হয়ে যায়, তখন সে মহিলা হয়ে যায়। (সুনান তিরমিজি, হাদিস নং ১১০৯)
কাজেই একথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে ৯ বছর বয়সে আম্মাজান আয়েশা রা. বালেগা হয়ে গিয়েছিলেন।
বুখারি ও আবু দাউদের প্রসিদ্ধ হাদিসগুলোই প্রমাণ করে যে, আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা. এঁর বিয়ে বা আকদের পরও ৩ বছর তিনি বাবা আবু বকর সিদ্দিক রা. এঁর ঘরে ছিলেন।
এখন ফিরে যান সূরা তালাকের সেই ৪ নং আয়াতের দিকে। যদি ধরে নিই যে, ওই আয়াত মেয়ে শিশুদের সাথেও বিয়ে জায়েজ বলে কিন্তু নবি করিম ﷺর আমল প্রমাণ করে সহবাস জায়েজ না৷ যদি তাই না হবে তবে ৩ বছর কেন আবু বকর সিদ্দিক রা এঁর ঘরে ফেলে রাখবেন আম্মাজানকে? এটাই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে, আম্মাজান বালিগা হওয়ার জন্য নবি করিম ﷺ অপেক্ষা করছিলেন।
মায়াজাল্লাহ আস্তাগফিরুল্লাহাল আজিম, যদি আবু বকর সিদ্দিক রা. এঁর ঘরে থাকা ওই ৩ বছরের মাঝে কোন কারণে নবি করিম ﷺ আম্মাজানকে তালাক দিয়ে দিতেন তবে উনাকে ইদ্দত করতে হত কীনা সেই সমাধানই সুরা তালাকের ৪ নং আয়াত দিয়েছে।
কাজেই এটার সাথে ওটা জুড়ে দিয়ে নাস্তিক ও ইসলামের দুশমনরা যা প্রমাণ করতে চায় তা আদৌ ধোপে টিকে না।
প্রাসঙ্গিকভাবে, যেহেতু আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা. এঁর বিয়ের কথা এসেছেই, সেহেতু আরো কিছু জালিয়াতী তাদের ধরিয়ে দিই৷
তারা বলে নবি করিম ﷺ শিশুকামী ছিলেন। নাউজুবিল্লাহ মিন জালিক, মায়াজাল্লাহ আস্তাগফিরুল্লাহাল আজিম।
মক্কার কাফির কুরাইশ ও মদিনার ইহুদিরা নবি করিম ﷺর উপর অনেক অপবাদ দিয়েছে, যেমন জাদুকর, গণক, পাগল পর্যন্ত তারা বলেছে। কিন্তু কেউই নবি করিম ﷺকে শিশুকামী, নারীকামী, অর্থলিপ্সু বা মিথ্যুক প্রতারক বলতে পারে নাই।
যাইহোক, মক্কা শরিফে থাকতেই (জাহেলিয়াতের
যুগে) জুবায়ের ইবনু মুতইম রা. এঁর সাথে আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা. এঁর বিয়ে ঠিক ছিল। এটাও প্রমাণ করে শিশুবিবাহ তখনকার প্রথা ছিল। কিন্তু আম্মাজান খাদিজা রা. এর ইন্তেকালের পর ওসমান ইবনে মাজউন রা. এর স্ত্রী খাওলা বিনতে হাকিম রা. নবী করিম ﷺকে বললেন, আপনি কেন বিবাহ করছেন না? আমি কি আপনার জন্য একজন কনে খুঁজবা না যিনি আপনাকে আপনার ঘর সংসারের দেখভাল করবেন? কুমারীও আছে বিধবাও আছেন। আর সর্বোত্তম কুমারী আবু বকর সিদ্দিক রা এর কন্যা আয়েশা। সর্বোত্তম বিধবা সাওদা বিন্তু যাময়াহ রা.।
Point to be noted. এখানে খাওলা বিন্তে হাকিম রা. নবি করিম ﷺকে জিজ্ঞেস করলেন ঘর সংসার গুছিয়ে রাখবেন এমন কাউকে আনতে পরামর্শ দিচ্ছেন। এখন ৬ কিংবা ৯ বছর বয়সের কেউ কি কারো ঘর সংসার সামলাতে পারে? অবশ্যই না। এজন্যই আমরা আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা. এর বয়স বাসর রাতের সময় ৯ ছিল বলে মানি না। যাইহোক সে বিষয়ে সবিস্তারে লিখব অচিরেই ইন শা আল্লাহ।
নবী করিম ﷺকে ওই মানুষগুলো নারীলোভী হিসেবে উপস্থাপন করে। আর নবি করিম ﷺ ইসলাম প্রচার নিয়ে এত ব্যস্ত ছিলেন যে, আম্মাজান খাজিদাতুল কুবরা রা. এঁর ইন্তেকালের পর অনেক বছর কাটিয়ে দেন, বিয়ের কথা চিন্তাই করেন নাই।
সবচাইতে বড় কথা, নবি করিম ﷺর যৌবনকাল কাটিয়ে দিলেন তাঁর চাইতে ১৫ বছর বেশি বয়স্কা একজনের সাথে। ওই সময়েই তো সকল চাহিদা মানুষের বেশি থাকে।
তারা তখন বলে, আম্মাজান খাদিজা রা. এঁর অনেক সম্পদ ছিল, এজন্য বিয়ে করেছিলেন। তাহলে এই অঢেল সম্পদ কোথায় গেল? নবী করিম ﷺ যদি সম্পদের আকাংখাই করতেন তাহলে এত এত অঢেল সম্পদ কোথায় গেল? নবি করিম ﷺ তো ব্যবসাও জানতেন। তাহলে তো উনার আরবের সবচাইতে বড় বিজনেস ম্যাগনেট হওয়ার কথা ছিল। তা হবেন দূরে থাক, শিয়াবে আবু তালিবে দিনের দ পর দিন গাছের পাতা খেয়ে থেকেছেন কেন নবি করিম ﷺ, তাঁর পরিবার ও সাহাবায়ে কেরাম? সেই অর্থ কোথায় গেল? সব গরিব সাহাবায়ে কেরামের মাঝে নবী করিম ﷺ তা বন্টন করে দিয়েছিলেন। তাহলে কোথায় রইল নবীজির ﷺর অর্থের প্রতি লোভ?
নবী করিম ﷺর যদি নারী ও অর্থের প্রতি লোভ থাকবে তাহলে মক্কায় থাকাকালীন উতবা যখন নবী করিম ﷺকে ইসলামের দাওয়াতের শুরুতেই যখন নবীজি টগবগে যুবক তখনই অফার করেছিল যে, "মক্কার কাফির কুরাইশরা নবীজিকে আরবের শ্রেষ্ঠ ১০ সুন্দরী নারী এনে দেবে, রাজত্ব দেবে সম্পদ দেবে তিনি যেন ইসলামের দাওয়াত থেকে সড়ে আসেন।" তখন কেন নবী করিম ﷺ একথা বললেন, যদি আমার এক হাতে চাঁদ আর আরেক হাতে সূর্য এনে দেয়া হয় তবুও আমি এই দাওয়াতের কাজ থেকে সড়ে আসব না।
যদি আমার বিজ্ঞ প্রতিপক্ষরা পিক এন্ড চুজ করে এসব বিশ্বাস না করেন তবে আসলে এই বিতর্ক চালিয়ে যাওয়ার কোন মানে হয় না। আর যদি তারা এসব বিশ্বাস করেন এবং তারা অবশ্যই জানেন এসব সত্য, তাহলে এখানেই প্রমাণিত হয় যে, হুজুর রাসূলুল্লাহ
ﷺ কত সুমহান চরিত্রের অধিকারী ছিলেন।
আর যদি তারা বলেন, নবি করিম ﷺ নবুয়্যাতের মাধ্যমে আরো বড় দুনিয়াবী লক্ষ্যের জন্য অপেক্ষা করছিলেন, তাহলে আমি বলব, কোথায় সেই লক্ষ্য?
নবি করিম ﷺ যদি চাইতেন ১২ জন কুমারী নারী বিয়ে করতে পারতেন। অথচ আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা. ছাড়া একজনও কুমারী নন। নারীলোভী কোন মানুষটা বয়স্ক, বিধবা কিংবা তালাকপ্রাপ্তা নারীকে বিয়ে করে?
এবং নবি করিম ﷺর এই প্রতিটি বিয়ের পেছনে যুক্তিসঙ্গত কারণ ছিল। প্রতিটি বিয়ের পেছনের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করলে ২ ঘন্টা সময় এখানেই চলে যাবে তাই আমি সেটা স্কিপ করলাম।
আর কোথায় নবি করিম ﷺর সেই ইসলামের বিনিময়ে দুনিয়াবী সম্পদের লক্ষ্য? বদরের যুদ্ধে অনেক গনিমত পেলেন। তখনই যদি চাইতেন আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা. কে ঘরে তুলতে পারতেন। কিন্তু না, আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা কে ৩ বছর আবু বকর সিদ্দিক রা এঁর ঘরে রাখলেন।
আবু বকর সিদ্দিক রা. বিয়ের ৩ বছর পর যখন আম্মাজান বালিগা হলেন, তখন জিজ্ঞেস করলেন নিজে এসে যে ইয়া রাসুলাল্লাহ!
আপনার স্ত্রীকে আপনি ঘরে তুলছেন না কেন?
নবি করিম ﷺ ওই মূহুর্তে বললেন, আমার কাছে তো টাকা নেই মোহরানা হিসেবে কিছু দেয়ার জন্য।
সুবহানাল্লাহ! কিছুদিন আগেই এত বড় একটা যুদ্ধ জয় করলেন! কোথায় গেল গনিমত, ফিদইয়া ও খুমুসের সেই টাকা? সব বিলিয়ে দিয়েছেন গরিব সাহাবায়ে কেরামের জন্য।
এখানে তারা আপত্তি তুলে যে, নবি করিম ﷺর কাছে মোহরানা দেয়ার টাকা ছিল না বলেই আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা. কে ঘরে তুলেন নাই।
কিছুদিন আগেই তো বদরের যুদ্ধে জয়ী হলেন। গনিমত, ফিদইয়ার টাকা, খুমুসের টাকা কোথায় গেল? মায়াজাল্লাহ আস্তাগফিরুল্লাহাল আজিম নারীলোভী ও শিশুলোভী একজন মানুষ টাকা থাকার পরও কেন তাঁর স্ত্রীকে ফেলে রাখবেন বাবার ঘরে?
বরং নবি করিম ﷺর এই বিষয়ে কোন লক্ষ্যই ছিল না৷ বরং আবু বকর সিদ্দিক রা যখন মনে করিয়ে দিলেন ওই মূহুর্তে মনে হল আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা কে ঘরে তোলা দরকার৷ কিন্তু মোহরানা হিসেবে কিছু নগদ অর্থ দিতে হবে তা তো নেই। নবীজির ﷺকে আবু বকর সিদ্দিক রা. উল্টো বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার কাছে ২০০ দিরহাম আছে তা ধার নিয়ে আপনি আয়েশাকে ঘরে তুলে নিন।
নবী করিম ﷺ তাই করলেন।
বুখারী ও অন্যান্য কিতাবের বর্ণনা অনুযায়ী আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা. এর ৯ বছর বয়সে বাসর ও ১৮ বছর বয়সে নবি করিম ﷺ ইন্তেকাল করেন অর্থ্যাৎ তিনি বিধবা হন, ৯ বছর সংসার করেন। নবি করিম ﷺ ১১ হিজরি সনের রবিউল আওয়াল মাসের শুরুতে ইন্তেকাল করেন। তার মানে ২ হিজরী সনে নবি করিম ﷺআম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা কে ঘরে তুলে নেন। অর্থ্যাৎ বদরের যুদ্ধের পরে।
সিরতের কিতাবে এসেছে ২য় হিজরীর রামাদান মাসের ১৭ তারিখে হয়েছে বদরের যুদ্ধ আর পরের মাস শাওয়াল মাসে আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা. কে নবি করিম ﷺ আবু বকর সিদ্দিক রা. এঁর দেয়া ধার করা ২০০দিরহাম দিয়ে ঘরে তুলতে হয়েছে। একজন শিশুকামী ও নারীকামী পুরুষ শিশু ও নারীর জন্য উন্মাদ হয়ে থাকবে, এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু বদরের যুদ্ধে এত এত গনিমত, খুমুস ও ফিদইয়ার অর্থ পাওয়ার পরও নবি করিম ﷺকেন আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা. কে ঘরে তোলার কথা চিন্তা করেন নাই?
একজন শিশুকামী ও নারীলোভী পুরুষের পক্ষে এটা কিভাবে সম্ভব?
জাস্ট বিবেক খাটান। উত্তর পেয়ে যাবেন৷ নবি করিম ﷺর কাছে এসব বিষয় খুবই তুচ্ছ বিষয় ছিল।
হে আমার নারী দরদী ভাইয়েরা! আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা. এঁর প্রতি আপনাদের এত দরদ কিন্তু আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা. তো নবীজির পরও প্রায় ৩৯ বছর দুনিয়াতে ছিলেন, কোনদিন তো তিনি একটি টু শব্দও করেন নাই যাতে বুঝা যায় যে, তিনি কোন কারণে নবি করিম ﷺর উপরে দুঃখিত ছিলেন। আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা. সুখী ছিলেন, খুশি ছিলেন এবং নবি করিম ﷺকে প্রাণের চাইতে অধিক ভালোবাসতেন, অপেক্ষা করে পথ চেয়ে থাকতেন কখন ঘরে আসবেন নবি করিম ﷺ। তাহলে আপনাদের সমস্যা কোথায়?
আর নাবালিগা মেয়েদের সাথে সহবাস করলে মেয়েদের শারীরিক ও মানসিক ও স্মৃতিশক্তিগত অনেক সমস্যা দেখা দেয়। কোথায়? আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা. এঁর তো তেমন কোন সমস্যাই হয় নাই। বরং তাঁর সম্পর্কে গ্রহণযোগ্য মত এসেছে তিনি শ্রেষ্ঠ ফকিহ সাহাবিদের একজন ছিলেন, সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারীদের একজন এবং খুবই দক্ষ বক্তা ছিলেন। হজরত ওমর রা এর ভুল ধরতেন তিনি এতটা সূক্ষ জ্ঞানী ছিলেন।
হজরত ওমর ফারুক রা. ও আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. উভয়েই বলতেন যে, নবি করিম ﷺ বলেছেন, মানুষের বিলাপ ও রোদনের (নিহা) কারণে মুর্দাকে কবরে আজাব দেয়া হয়।
এটা শুনে আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা. বলেন, আল্লাহ পাক ওমরের উপর রহমত করুন। তিনি কি এই আয়াত শুনেন নাই? আল্লাহ পাক বলেন, "একে অপরের বুঝা বহন করবে না"। অর্থাৎ একের পাপের জন্য অপরকে শাস্তি দেয়া হবে না। জীন্দা মানুষের গোনাহের জন্য মূর্দাকে আজাব দেয়া হবে না। এটা জুলুম। আল্লাহ পাক জুলুম করতে পারেন না।
এই কথার অর্থ এরকম নয় যেমনটা ওমর রা. বুঝেছেন। বরং নবি করিম ﷺ বলতে চেয়েছেন যে, এরা তো এখানে বিলাপ ও রোদন করে করে মূর্দার প্রশংসা করছে, আর ওদিকে মূর্দার উপরে আজাব হচ্ছে।
সুবহানাল্লাহ। কত ধীশক্তিসম্পন্ন ছিলেন আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা.। নাবালেগা কোন মেয়েকে বিয়ে করলে শারীরিক, মানসিক অবস্থা এতটা স্ট্রং কোনভাবেই থাকতে না। এসবকিছু সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা. বালিগা ছিলেন বাসর রাতের সময়।
আর আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা. এঁর আসল বয়স কত ছিল বাসর রাতে তা বিস্তারিত দলিলসহ ইন শা আল্লাহ পরবর্তী পোস্টে আলোচনা করব।
উল্লেখ্যঃ এখানে আমি সকল কথার রেফারেন্স যোগ করিনি ইচ্ছাকৃতভাবে। কোন নাস্তিক চ্যালেঞ্জ করুক। সকল অস্ত্র দেখিয়ে ফেলতে নেই। এটা যুদ্ধের নিয়ম।
No comments:
Post a Comment